ওয়েব ডেস্ক: পবিত্র মাহে রমজান মাস চলছে। ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। কলকাতায় এখন প্রচণ্ড গরম। সে কারণে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা এবার মনে করেছিলেন চড়া রোদ-গরমে এবারের ঈদের বাজার সে ভাবে জমবে না। কিন্তু সেই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে জমে উঠেছে নিউমার্কেট চত্বরসহ কলকাতার বিভিন্ন শপিংমলের ঈদের বাজার। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইতোমধ্যেই লোকজন কেনাকাটা করতে শুরু করে দিয়েছেন।
সকালের দিকে একটু বাজার জমে উঠলেও বেলা বাড়তেই লোকজন উধাও হয়ে যায়। আবার ঠিক পাঁচটা থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় চলা দায় হয়ে ওঠে নিউমার্কেট চত্বরে। জোর কদমে চলছে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি।
ঈদুল ফিতরের আগে কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বরে বাংলাদেশি পর্যটক তেমন ভাবে না থাকলেও ভিড় ছিল চোখে দেখার মতো। কলকাতা নিউমার্কেট চত্বরে এক কাপড় ব্যবসায়ীর মতে, গত বছরের থেকে এবারের ব্যবসা ভালো হয়েছে তাদের। প্রত্যেকবার ঈদের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলো থেকে ক্রেতারা ঈদের বাজার করতে শপিংমলে বেশি আসেন।
কিন্তু এবার নিউমার্কেট চত্বরে শপিংমলে ও সেখানকার বিভিন্ন গার্মেন্টসের দোকানে বাংলাদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন জেলার স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়ে খুশি ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেট চত্বরে ব্যবসায়ী রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, গত বছরের থেকে এবার ভালো ব্যবসা হয়েছে।আমরা ভাবিনি এবারের রমজানে এতো ভালো ব্যবসা হবে। এবারের বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ছিল নায়রা, আলিয়া, ঘারারা-সারারা, গাউন, কটনের ফেব্রিকের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, আজরাক সিল্ক, সামো সিল্ক। তবে সব থেকে বেশি বিক্রি হয়েছে অরগাঞ্জা আনারকলি। এখানকার পর্যটকরা বাংলাদেশি পর্যটকদের উপরই বেশি নির্ভর করে।
রাজেশ কুমার তিওয়ারির ধারণা এখন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশে ছুটি চলছে। ঈদের শেষে কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ঢল নামবে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের একটা ট্রেন্ড চলছে। তবে এর ফলে এখানে কোনো ধরনের ব্যবসায় প্রভাব পরছে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী রাজেশ কুমার তিওয়ারি বলেন, এগুলো ইউটিউব এবং ফেসবুকে যারা ছাড়ে তারা নোংরামি করে। ভারত এবং বাংলাদেশে আগে যা সম্পর্ক ছিল সেই সম্পর্কই আছে। এতে আমাদের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। এত বছর ধরে ব্যবসা করছি এই বয়কট আমি প্রথম শুনছি আগে কখনো শুনিনি।
জুতা থেকে থ্রি-পিস, মহিলাদের ব্যাগ, বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনতে কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে শ্রীলেদার্স, সাউথসিটি মল, কয়েস্ট মল, এমবাজার, বাজার কলকাতা, সিমপার্ক মল, সিটি সেন্টার, বিশালসহ কলকাতার বিপণিবিতানে বাংলাদেশি পর্যটকদের ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের শিবচর মাদারীপুরের বাসিন্দা ইমাম হুসেন কলকাতায় এবারের ঈদের বাজার করতে এসে বলেন, আমি প্রত্যেকবারই ঈদের আগে কলকাতায় পোশাক কিনতে আসি। এখানে পোশাকের দাম অনেক কম এবং ভ্যারাইটিও অনেক থাকে। কেনাকাটা করে ফের বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। ঈদ বাংলাদেশেই পরিবারের সঙ্গে কাটাবো।
ভারতীয় পন্য বর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা একশ্রেণীর লোকেদের তৈরি করা। এতে কোনো প্রভাব পড়বে না। পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কালচার একই রকম। একটা অপপ্রচার চলছে, এই অপপ্রচার আমাদের সবাইকে মিলে রোধ করতে হবে। যারা মুখে বলছে বয়কটের কথা তারাও দেখবেন কলকাতায় এসে কেনাকাটা করছে।
বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা ইলিয়াস তার বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় ঈদের কেনাকাটা করতে এবং ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা করলাম। নিজের জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য বেশ কিছু কেনাকাটা করা হয়েছে। ঈদের আগেই দেশে ফিরে যাব এবং পরিবারের সবার সাথে দেশেই ঈদ করব।
সপরিবারে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের তানবীর। মা, স্ত্রী এবং মেয়ের জন্য একাধিক পোশাক কিনেছেন তিনি। তার মেয়ের জন্য শ্রীলেদার্সের ব্যাগ কিনে ফেরার পথে তিনি বলেন, আমি প্রায়ই ব্যক্তিগত কাজে কলকাতার নিউমার্কেটে আসি। কাজের ফাঁকে পরিবারকে নিয়ে কলকাতায় এসে ঘুরেও গেলাম এবং ঈদের কেনাকাটাও করা হলো। তবে ঈদ আমরা দেশে গিয়েই পালন করব।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন শপিংমলসহ নানা ধরনের পোশাকের দোকানে কেনাকাটার উপর পণ্যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ফলে সবমিলিয়ে কলকাতায় ঈদের বাজার বেশ জমজমাটই বলা যায়।